কেয়া চক্রবর্তী :
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের একটা ছোট্ট জেলা মাগুরা। খুলনা বিভাগের অন্তর্গত এই জেলাটির চারদিক পরিবেষ্টিত ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, নড়াইল দিয়ে। একটা সময় মাগুরা বৃহত্তর যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সেটা এখন শুধুই ইতিহাস। সময়ের সাথে মাগুরা এখন স্বতন্ত্র জেলা। ১৮৪৫ সালেই মাগুরা মহকুমা হিসেবে পরিচিতি পায়৷ এর আয়তন প্রায় ১০৪৮ বর্গকিমি৷ আয়তনে ছোট হলেও মাগুরায় প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ মানুষের বসবাস।
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মাগুরারও আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ‘মাগুরা’ নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানা মতবাদ। অনেকের মতে, মুঘল আমলেই মাগুরার নামকরণ হয়। মাগুরা জেলায় অনেক মগ দস্যু ছিল৷ তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে জনগণ দস্যু দমন শুরু করে। সেই থেকেই সম্ভবত অঞ্চলটির মাগুরা নামকরণ করা হয়৷ আবার কারো কারো মতে, মাগুরার বিভিন্ন নদীতে প্রচুর পরিমাণে মাগুর মাছ পাওয়া যেতো। সেই মাগুর থেকেই নাকি মাগুরা নামটি আসে।
এবার আসা যাক নদীমাতৃক মাগুরাতে। মাগুরায় যেন নদীমাতা আশীর্বাদ ঢেলে দিয়েছে। নবগঙ্গা, গড়াই, চিত্রা, মধুমতী, ফটকি,আলমখালী এবং বেগবতী নদীসহ রয়েছে উল্লেখযোগ্য আরো নদী রয়েছে ছোট্ট এই জেলাটিতে। এছাড়া এখান দিয়ে প্রবাহিত হয় বিখ্যাত কুমার এবং মরাকুমার নদ। মাগুরার অন্তর্গত মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা গ্রামে গেলে দেখা মেলে এই জেলার বিখ্যাত ইছামতী বিলের। এসব নদী, বিলের সুস্বাদু মাছের জন্যও রয়েছে মাগুরার সুখ্যাতি।
ঐতিহ্যবাহী খাবারেও পিছিয়ে নেই মাগুরা। বিশেষ করে রয়েছে রকমারি মিষ্টি। মাগুরার রসমালাই বাংলাদেশ খ্যাত। এছাড়া খামার পাড়ার মিষ্টি দই, প্যারা সন্দেশ এবং ক্ষীর সন্দেশ বা বরফি সন্দেশ মাগুরার প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করছে। শীতকালে এখানকার খেঁজুর রস খেতেও আশপাশের জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসে।
আরো একটি বিশেষ কারণে মাগুরার রয়েছে আলাদা পরিচিতি ৷ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জন্মস্থান এই মাগুরা। বিখ্যাত কবি ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান এবং কবি কাদের নেওয়াজ, বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের মত গুণী মানুষদের জন্মও খ্যাতি বাড়িয়েছে ছোট্ট এই জেলার।
বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই জেলাটি। এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে রয়েছে সেসব নিদর্শন৷
সীতারাম রাজার প্রাসাদ : মাগুরা শহর থেকে ২৮ কি.মি দূরে মহম্মদপুর উপজেলায় অবস্থিত সীতারাম রাজার প্রাসাদ ভবন৷ বলা হয়, তিনি নাকি মগ দস্যুদের বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিলেন এবং এই এলাকায় দস্যুদের অত্যাচারও দমন করেন তিনি।
ভাতের ভিটা : মাগুরা সদর থেকে প্রায় ১৪ কি.মি দক্ষিণের মঘি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ভাতের ভিটা। এটি ফটকি নদীর তীরে অবস্থিত।
মোকাররম আলী শাহ(রঃ) দরগাহ : হযরত খান জাহান আলীর একনিষ্ঠ শিষ্য মোকাররম আলী শাহ(রঃ)’র মাজার ইছাখাদা গ্রামে।
সিদ্ধেশ্বরী মঠ : জেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে আঠারোখাদা গ্রামে অবস্থিত। এখানে মূলত সিদ্ধেশ্বরী মাতার শীলাখন্ড এবং কালী মূর্তি রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে ন্যাংটা বাবার আশ্রম, চণ্ডীদাস ও রজকিনীর ঐতিহাসিক ঘাট এবং কবি কাদের নেওয়াজের বাড়ি।
তবে বাংলাদেশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মতো মাগুরার এইসকল স্থানে পর্যটক তেমন আসে না। গ্রাম্য সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মাগুরাও একদিন পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকবে এটাই এলাকাবাসীদের কাম্য। তারা চায় এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারও যেন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে যাতে মাগুরার যথাযথ ব্র্যান্ডিং করে তার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়৷