বর্তমান সময়ের সবচেয়ে তুমুল আলোচনার বিষয়, জেনারেশন জেড। তথাকথিত ফোন চালানো জেনারেশন নামে পরিচিতি পাওয়া প্রজন্মটা এখন পত্রিকার শিরোনামে, মিছিলের স্লোগানে কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাড়া জাগানো এক বিস্ময়ের নাম। তারা শুধু ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং দেশ ও দশের প্রয়োজনে, রাষ্ট্র মেরামত ও পরিচালনাতেও নিজেদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।
সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত বিকাশ হয়েছে, সেই সাথে সময়ভেদে বিদ্যমান প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠেছে একেকটি প্রজন্ম। প্রযুক্তিগত বিকাশের নিরিখে সর্বশেষ প্রজন্ম হচ্ছে Gen Z (জেন জি) বা জেনারেশন জেড-যাদের আরেকটি নাম জুমরাস্। এটি মিলেনিয়ালদের (যাদের জন্ম ১৯৮১-৯৬) পরবর্তী এবং জেনারেশন আলফার পূর্ববর্তী একটি ডেমোগ্রাফিক শ্রেণি।
পিউ রিসার্চ অনুসারে, মূলত যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তারাই GenZ, বস্তুত এরাই প্রথম ডিজিটাল জেনারেশন। এই প্রজন্মের লোকের জীবনযাত্রা, আচরণ এবং মূল্যবোধে প্রযুক্তির গভীর প্রভাব থাকায় ধারণা করা হয়েছিলো, এই প্রজন্মটা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। বলা বাহুল্য এদের বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি হওয়ায় বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই পৃথিবীর সব তথ্য তাদের হাতের মুঠোয়। এরা সামাজিকভাবে পরস্পরের প্রতি সহমর্মি ও সহযোগী। অল্প বয়সেই এরা গ্লোবাল কৃষ্টি কালচার সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেছে। GenZ অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ, এদের দৃষ্টিভঙ্গি ত্রিমাত্রিক। এরা সত্য, নির্ভীক এবং প্রতিবাদী। বর্তমানে বিশ্বের সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের মূল হোতা এই জেন জি। অথচ এই অসুস্থ, গেমিং এ আসক্ত বলা জেনারেশনটা বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বে দ্যুতি ছড়িয়েছে কিভাবে লড়াই করতে হয়, কিভাবে বন্দুকের গুলির সামনে বুক পেতে দিতে হয়,কিভাবে অপশক্তিকে দমিয়ে রাখতে হয়। শ্রীলংকা, বাংলাদেশে এদের আন্দোলনের প্রভাব ও বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানে চলমান আন্দোলনের চিত্র থেকে স্পষ্ট যে, এই জেনারেশন আগামী দিনে দারুণ কিছু করবে।
সত্যিকার অর্থে Gen Z দের সাথে এদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের চিন্তাধারার বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আজকে যারা ছাত্র আন্দোলন করছে তাদের প্রায় সবাই Gen Z এর অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯০ এর শেষের দিকে জন্মগ্রহণকারী আমেরিকানদের বর্ণনা করতে ব্যবহৃত শব্দটি এই ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত এবং আমাদের চারপাশে বিশেষভাবে সমাদৃত। Gen Z এর ডিজিটাল দক্ষতা, বাস্তববাদী মনোভাব ও সচেতনতার অনন্য মিশ্রণ তাদের পরবর্তী প্রজন্ম Generation Alpha (যাদের জন্ম ২০১৩ থেকে ২০২৫) এর মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। জেনারেশন আলফা জন্ম থেকেই অনলাইন মুখর,যারা শৈশব থেকেই দূরবর্তী ক্লাসরুম, ট্যাবলেট কম্পিউটার এবং সর্বব্যাপী স্ট্রিমিং পরিসেবার অভিজ্ঞতা লাভ করতে সক্ষম। তারা সম্ভবত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(AI) এর উদীয়মান ব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত হবে।এভাবে একটি থেকে আরেকটি প্রজন্মের সম্মিলিত প্রয়াসে সত্য ও ন্যায়ের পথে সমাজ, রাষ্ট্র তথা সুস্থ -সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।
লিখেছেন –