টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ানিং শব্দ কানে আসলেই আমাদের মাথাতে যে প্রশ্ন সবার আগে এসে থাকে সেটা হলো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং আসলে কি? টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজই বা কি? টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ কেমন? এছাড়াও আরো অনেক ভাবনা অনেক প্রশ্ন আসে মনের মধ্যে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটা উচ্চারিত হলেই আমরা বুঝি ‘Electrical and Electronics Engineering (EEE), Computer Science Engineering (CSE), Mechanical Engineering (Mech Eng.)’ কিন্তু এগুলার বাহিরে ও আরো অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় আছে সে গুলোর সম্ভন্ধে আমাদের ধারণার পরিধি তুলনামূলক কম এবং সেই অবস্থান থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্ভন্ধে ধারণা এবং জানার ইছা কম। কারণ কোন বিষয়ে বা কোন কিছুর সম্পর্কে আমাদের চর্চা যত কম হবে তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা ও তত কম হয়ে থাকবে । আর তার মধ্যে অন্যতম হলো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ানিং ।
আদিম গুহাবাসী মানুষ যখন বুঝতে শিখলো যে শরীরের লজ্জা নিবারণের প্রয়োজনীয়তা আছে, ঠিক সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিলো সেই প্রয়োজনীয়তার বাস্তবায়ন। খুব সম্ভবত ৪২,০০০ থেকে ৭২,০০০ বছর আগে পোশাকের উদ্ভব ঘটেছিল ।রিপাবলিক অব জর্জিয়ার প্রাগৈতিহাসিক গুহায় ৩৬০০০ বছর আগের পোশাক-পরিচ্ছদে ব্যবহৃত শুকনা শন (খড়)-এর আঁশ পাওয়া গেছে। পৃথিবীর পুরনো পোশাকের অন্যতম শাড়ি এ উপমহাদেশের নারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সুতা এবং কাপড় বোনার শিল্প ভারতবর্ষে এসেছিল মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা থেকে। তবে ৫০০০ বছর পূর্বে মিশরে একটি আধুনিক পোষাকের খোঁজ পাওয়া যায়।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো পুরো বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত শাখা যা টেক্সটাইল পণ্যগুলির উন্নয়ন, উৎপাদন এবং পরিবেশ বাঁচানোর প্রযুক্তিগুলি শিখায়। টেক্সটাইল প্রক্রিয়াগুলি একটি স্বচ্ছ এবং সম্পূর্ণভাবে সংস্কারযোগ্য কাজ।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার মাধ্যমে আপনি টেক্সটাইল উৎপাদন প্রসেস এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান প্রাপ্ত করতে পারেন। এছাড়াও আপনি নতুন কিছু উদ্ভব করতে পারেন, যা বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।আরও অনেক কারণ রয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য, যেমন এটি উন্নয়নশীল একটি ক্ষেত্র যা একটি স্থিতিশীল কর্ম বাজার প্রদান করতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রিয় শিল্প গুলোর মধ্যে অন্যতম শিল্প হচ্ছে টেক্সটাইল শিল্প। বর্তমান প্রযুক্তির এই যুগে যে কয়টি পেশার সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে টেক্সটাইল সেক্টর হল অন্যতম। তাছাড়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই টেক্সটাইল শিল্পের উন্নতির চরম শিখরে পৌছেঁ গেছে। ফলে এই শিল্পে দক্ষতা সম্পন্ন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ব্যাপক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টেক্সটাইল শব্দটি সর্বপ্রথম ওভেন/বোনা কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে টেক্সটাইল শব্দটি একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ যার মধ্যে সকল প্রকার ফাইবার যেমনঃ তুলা, পাট, উল, সিল্ক, হেম্প ইত্যাদি। এ ছাড়াও কিছু প্রক্রিয়া আছে যে গুলা ছাড়া টেক্সটাইল অসম্পন্ন থেকে যায় যেমনঃ উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং ইত্যাদি এ সবগুলোই টেক্সটাইলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে গার্মেন্টস ফিনিশিং করে বায়ার পর্যন্ত পণ্য পৌছে দেওয়া পর্যন্ত যতগুলো প্রসেসিং সম্পন্ন হয় সে সবগুলোই হলো টেক্সটাইলের। আর যে বা যারা এই কাজ সম্পন্ন করে থাকে তাকে বা তাদেরকে বলা হয়ে থাকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ানিংকে প্রধানত চার (৪) টি বিষয়ে ভাগ করা হয়েছে যেমনঃ
· Yarn manufacturing engineering.
· Fabric manufacturing engineering.
· Wet processing engineering.
· Apparel manufacturing engineering.
টেক্সটাইল সেক্টর এর সকল কাজ এই চারটি বিষের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত এগুলো ছাড়া টেক্সটাইল সেক্টর কে কল্পনা করা সম্ভব নয়।
টেক্সটাইল প্রকৃতি থেকে আমাদের জীবনের অনেক বিভিন্ন দরজা খুলে দেয়, যেমন কাপড় পরিহিত এবং বস্ত্র উৎপাদন, পাট থেকে তৈলক্ষত ও ব্যবহার, জুট থেকে রেশমি ও পুতুল নির্মাণ, তাঁবুদের উৎসব বাঁচানো কাপড় ও ফ্যাশন প্রোডাক্ট উৎপাদন, মেডিকেল এপারেল উৎপাদন ইত্যাদি। এর সাথে সাথে টেক্সটাইল উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে যা সমস্ত মানব জীবনে অপরিহার্য।
কাপড় পরিহিত এবং বস্ত্র উৎপাদন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ব্যবসায়িকভাবে সম্পন্ন হয় এবং মানব দৈনন্দিন জীবনে একটি প্রাথমিক প্রয়োজন। এছাড়াও, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল পরিবেশ সংরক্ষণে। একটি পরিপূর্ণ টেক্সটাইল
বর্তমান যুগের টেক্সটাইল ছাড়া পৃথিবীকে চিন্তাই করা যায় না। মানুষের বেঁচে থাকার চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা টেক্সটাইল পূরণ করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টেক্সটাইল এর ব্যবহার হয়। টেক্সটাইল পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বপরি টেক্সটাইলের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের ২৮ বিলিয়ন ডলারের টেক্সটাইল এবং পোশাক শিল্প তার অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক- জিডিপির ২০ শতাংশ এবং রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি উৎপন্ন করে। এটা বলা যেতেই পারে বাংলাদেশ এর অর্থনীতির বৃহত তম অংশ নির্ভর করে এর টেক্সটাইল সেক্টর এর উপরে।
ইঞ্জিনিয়ার একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ প্রকৌশলী। ইঞ্জিনিয়ারিং মানে হচ্ছে প্রকৌশলের মাধ্যমে কোন কাজ সু-সম্পন্ন করাকে বুঝায়। বিশ্বায়নের এই যুগে শিল্প ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা ক্রমশই দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আর এ কারণেই বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুরুত্ব।
নিশ্চিত কর্মসংস্থানের একমাত্র এবং পরীক্ষিত মাধ্যম হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। সারা বিশ্বে জেনারেল শিক্ষার চেয়ে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বেশি জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রকৌশল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অতি সহজ ভাবে, কম সময়ে, কম খরচে, কম জনশক্তিতে করা যায়।বর্তমান সময়ে যতগুলো পেশাকে উন্নতির বা সাফল্যের মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে নিঃসন্দেহে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং তার মধ্যে অন্যতম।
আপনি যদি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। তবে আপনাকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং পড়তে হবে অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছর মেয়াদী Bachelor of Science (B.Sc.) ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। এছাড়া ও বাংলাদেশের বহু সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ আছে। এছাড়া ও উচ্চ শিক্ষার জন্য Masters of Sciences (MSc) এবং Doctor of Philosophy (PhD) করার সু্যোগ আছে।
কাজে জন্য আছে টেক্সটাইল সেক্টরে আনেক সুযোগ। আমাদের দেশে RMG Factory, Textile mills (Knitting,Dying,Washing) মিলিয়ে প্রায় ৭০০০ এর অধিক industry রয়েছে। যেখানে প্রায় 4.0 million শ্রমিক যুক্ত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রোডাকশন অফিসার / ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে ইউনিট প্রধান / উচ্চ পদস্থ কর্মকরতা জীবন নির্বাহের জন্য handsome salary পেয়ে থাকে। বেসরকারী চাকরির বাজারে Textile Sector এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। Textile Sector একটি সাগর এর মত , সাগর সম্বন্ধে যেমন আমাদের জানার আনেক বাকি Textile Sector টা ঠিক তেমনি ।
পরিশেষে এতটুক বলতে পারি Textile Engineering career প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ভালমানের subject কারণ এটার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের দেশের অর্থনীতি। দেশের জন্য কাজ করতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা কে সচল রাখতে Textile Engineering এর ভূমিকা থাকে সর্বদা অগ্রভাগে থাকবে ।
লিখেছেন :
কে এম শাহারুজ্জামান (শোভন)
বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।