গণিতের প্রতি ভয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যাথম্যাটিকস এনজাইটি বা ম্যাথেফোবিয়া। ড. ভিটার্ট বলেছেন, “অংকের ফলাফল, হয় ঠিক হবে, নাহলে ভুল। এখানে অন্য কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর সুযোগ নেই। এ কারণে অংক করার আগেই মানুষ সেটা ভুল হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন।”
আজ আমরা ম্যাথফোবিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখার অসাধারণ কিছু উপায় শেয়ার চেষ্টা করব।
ম্যাথকে ভয় নয়, জয় করব। এটাই হতে হবে আমাদের মূল মন্ত্ৰ । এক্সপ্রেসিভ রাইটিং” পদ্ধতি একটি উপায় হতে পারে। “এক্সপ্রেসিভ রাইটিং” হল গণিত নিয়ে ভয় ও উদ্বেগের কথা খাতায় বা ডায়রিতে লিখে প্রকাশ করা। এর ফলে ওয়ার্কিং মেমোরিতে চাপ কমে, ফলে ভয় অনেকটাই কমিয়ে আনা যায় |
গণিতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও খাপ খাইয়ে নেয়ার মাধ্যমেও এই ভয় দূর করা যেতে পারে। যেমন পরীক্ষাকে ভয়ের কিছু না ভেবে এক একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা। সেইসাথে ভয়কে সহজভাবে নেয়া। ভয় পেলেই যে পিছিয়ে পড়তে হবে, তা নয়।
গণিত নিয়ে মানসিক চাপ বা ভয় কেটে যাওয়ার পর অথবা গণিত পরীক্ষার আগে মানসিক চাপ অনুভব হলে অনুভূতিগুলো নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবুন, মূল্যায়ন করুন।
গণিতের ভয় দূর করার প্রধান উপায়ই হল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। শিশুদের ক্ষেত্রে তাদেরকে অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো গণিতের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে কোন অবস্থাতেই গণিতকে অনেক কঠিন বিষয়, সবাই গণিত পারে না, এসব বলে ভয় দেখানো যাবে না।
অংক না পারলে কোনভাবেই ঠাট্টা-তামাশা না করে তাকে গণিতের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করুন। গণিত মুখস্থ করতে নয় বরং গণিত বোঝার ওপর গুরুত্ব দিন ।
শুধুমাত্র পাঠ্যবই কেন্দ্রিক না করে ধাঁধা, কুইজ, সুডোকু, পুলসাইড পাজল, দাবা, বোর্ড গেম, রুবিক’স কিউব বা গণিতের নানা ধরণের অনলাইন খেলার সাথে যুক্ত করা যেতে পারে। এসব খেলা মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলে।
বিভিন্ন ছবি, ইলাস্ট্রেশন, ভিডিও, এনিমেশনের মাধ্যমে অংক শেখাটা অনেকটাই সহজ হতে পারে। গণিত নিয়ে অনেক মজার মজার বই রয়েছে অনলাইন প্রবন্ধ রয়েছে, সেগুলো পড়া যেতে পারে। বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে যদি গণিত শেখানো হয়। সেটা বেশি মনে থাকে। শুরুতে গণিতের জন্য সময় বেঁধে না দিয়ে, নিজের মতো লম্বা সময় ধরে শিখতে উৎসাহিত করুন। প্রথমে সময় বেশি লাগলেও ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
অনেকে অংক করার আগেই উত্তরপত্র দেখে নেন। এটা অনেকটা নিজেকে ঠকানোর মতো কাজ। উত্তর না দেখে আগে যাচাই করুন। ভুল থেকেই শেখা হবে।
নামতার হিসেব কিভাবে হল, সূত্রগুলো কিভাবে এল, এগুলো যাচাই করলে, মনে রাখা সহজ হবে।
সবসময় ক্যালকুলেটর বা গুগল নির্ভর না হয়ে, ছোটখাটো হিসাব মাথায় সেরে নেয়ার চেষ্টা করুন। গণিতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হলেন, একজন ভালো শিক্ষক। এছাড়া যাদের গণিতে আগ্রহ রয়েছে। তারা অন্যদের ভীতি দূর করতে এগিয়ে আসতে পারেন।
কেবল আপনার দ্রুত হার্টবিট এবং ঘামে ভেজা হাতের তালু, মানে এই নয় যে আপনি গণিতে ব্যর্থ হবেন |
প্রতিজ্ঞা হোক একটাই গনিতকে ভয় নয়,
নিয়মিত অনুশীলনে গনিতকে করব জয়।
লিখেছেন :
ফারজানা আফরোজ রিক্তা
শিক্ষার্থী, স্নাতক ৩য় বর্ষ
গণিত বিভাগ, ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর।
কন্টেন্ট রাইটার, গ্রীন ম্যান।